Medicine is not always found in the bottles, Tablets or vaccines. Let us understand the world's best medicines of this Century :
Dr. M A Halim Khan
Assistant Professor ( Endocrinology )
Diabetes ,Thyroid & Hormone Socialist
Labaid (Diagnostic) Malibagh Branch, Dhaka
হাসপাতালের পাশাপাশি বেডে শুয়ে আছে সন্তান সম্ভবা দুই মা আয়েসি এবং আবিদা। আয়েসির পেটে
ছেলে সন্তান যার নাম ইভান এবং আবিদার পেটে মেয়ে সন্তান যার নাম রুহানি। ভূমিষ্ট হবার
আগেই তাদের নাম ঠিক করে রাখা হয়েছে।
পাশাপাশি বেডে বেশ কয়েক দিন ধরে থাকার জন্য ইভান এবং রুহানির মধ্যে একটি মিষ্টি মধুর
সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। ইভান একটু অভিমানী, চঞ্চল আর রুহানি শান্ত স্বভাবের।
ইভান প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বলছে -" আমি এই দেশের মাটিতে ভূমিষ্ট হতে চাই না।"
রুহানি - "ও মা! কি বলছ তুমি! পাগল নাকি।"
ইভান - " হ্যাঁ আমি পাগল। যে দেশের ছাত্র তার শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলে। যে দেশের
বিবেকবান মানুষেরা নিগৃহীত। হঠকারিতার, মিথ্যাচার,সুদ-ঘুষ, অনিয়মে জর্জরিত একটি দেশের
নাগরিক হবার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। দেখতেই পাচ্ছ দুদিন ধরে আমার মন অনেক অনেক খারাপ। "
রুহানি -" হাহা হাহা হাহা! এই দেশে জন্ম না নিয়ে কি তোমার কোনো উপায় আছে ইভান?"
ইভান - " নেই আমি জানি। যদি উপায় থাকতো তাহলে আমি চলে যেতাম ফিনল্যান্ডের কোন এক মায়ের
গর্ভে। পৃথিবীর সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের নাগরিক হয়ে আমি ভূমিষ্ঠ হতাম! "
রুহানি -" আপনি ভালো তো জগৎ ভালো। তুমি এই দেশে জন্ম নিয়েওতো সুনাগরিক হতে পারবে। "
ইভান- "নষ্ট মানুষের দেশে জন্ম নিয়ে ভালো মানুষ হওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ।"
রুহানি -" তাহলে কি করবে তুমি? "
ইভান - " আমি আত্মহত্যা করবো। "
রুহানি -" হাহাহা হাহাহা হাহাহা! তুমি তো দেখছি সত্যিই ছেলে মানুষ।?"
ইভান -" একটা সিরিয়াস বিষয়কে হেসে উড়িয়ে দিওনা রুহানি। মায়ের নাভিরজ্জু ( umbilical
cord) গলায় প্যাঁচিয়ে মরে যাবো আমি। সবাই ভাববে আমার মায়ের মৃত সন্তান হয়েছে। কেউ
জানবেনা আমি অভিমানে আত্মহত্যা করেছি।এমন কি আমার মা-ও না।"
রুহানি -" এতো হতাশ হয়োনা ইভান। আমাদের দেশটি একদিন ফিনল্যান্ডের চেয়েও সভ্য মানুষের
দেশ হবে। আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশটিকে সুন্দর করে সাজাবো। আমাদের দেশটিকে ভিন্ন দেশের
কেউ এসে সভ্য মানুষের দেশ বানাবেনা। বানাতে হবে আমাদেরকেই।"
ইভান - " রুহানি, আমার উপর কেমন জানি চাপ চাপ লাগছে। মা'র জরায়ু মনে হয় সংকুচিত হচ্ছে।
মা'র মনে হয় প্রসব ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে। আমাকে মনে হয় ভূমিষ্ট হতেই হচ্ছে। আমার জন্য
দোয়া করো রুহানি। জানিনা তোমার সাথে আর কখনও দেখা হবে কিনা।"
২৫ বছর পরের কথা। ইভান এবং রুহানির জন্মগ্রহণ করা দেশটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য দেশ।
দেশটিতে কোনো অন্যায় নেই, অবিচার নেই। দেশটির কারাগার গুলো সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কয়েদির
অভাবে। সততা, মেধা, দক্ষতার যথাযথ মূল্যায়ন আছে দেশটিতে।
ইভান এবং রুহানি দেশটির সবচেয়ে বড় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এমডি কোর্সে অধ্যয়নরত। ইভান
এডভান্সড এন্ডোক্রাইনোলজিতে আর রুহানি বায়োটেকনোলজিতে। লাইব্রেরিতে পড়তে যাবার সময়
প্রায়ই তাদের দেখা হয়। কিন্তু কথা হয়না। ইভান লাইব্রেরিতে এমন একটি জায়গায় বসে যেখান
থেকে রুহানিকে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে ইভান মায়া ভরা চোখে তাকায় রুহানির দিকে আর রুহানি
ইভানের দিকে। তাদের দুজনেরই মনে হয় কোথায় যেন তাদের দেখা হয়েছিল। কথা হয়েছিল।
-কোলেস্টেরল কমানোর সহজ উপায় হচ্ছে ডিমের কুসুম এবং অন্যান্য বেশি কোলেস্টেরলযুক্ত
খাবার পরিহার করা। এছাড়া মাখন, চর্বিযুক্ত গরুর মাংস ও খাসির মাংসের পরিবর্তে অসম্পৃক্ত
চর্বিযুক্ত খাবার যেমন- সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল, মাছ পর্যাপ্ত খাওয়া
উচিত।
-সবজি এবং ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী। এগুলো রক্তে কোলেস্টেরলও কমায়। দ্রবণীয় আঁশ পরিপাক
নালি থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল শুষে নেয়। শিম, বার্লিতে প্রচুর আঁশ থাকে।
-মাছ ও মাছের তেল কোলেস্টেরল হ্রাস কের। এর মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এটি রক্ত
থেকে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর চর্বি কমিয়ে ফেলে। সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার
সামুদ্রিক মাছ খাওয়া উচিত।
শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম শুধু রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় না, উপকারী
কোলেস্টেরলের পরিমাণ (বেশি ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল) ১০ শতাংশ বাড়ায়। জোরে জোরে
হাঁটলেও এমন উপকার পাওয়া যায়।কোলেস্টেরল কমানোর জন্য নানা রকম ওষুধ ব্যবহার করা যেতে
পারে, যেমন- নিয়াসিন, ফাইব্রেট,স্টেটিনস ইত্যাদি। স্টেটিনস রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল
২০ থেকে ৫০ শতাংশ কমাতে পারে।
গনি মিয়া একজন ব্যস্ত মানুষ। কখন কোন খাবার খাবেন সেটি নিয়ে ভাববার সময় তার হাতে নাই।
আজ সকালে তিনি হালুয়া দিয়ে ৪ টি রুটি খেয়ে অফিসে চলে গেলেন।
বেলা এগারোটায় ২ টি সিংগারা এবং একটি সমুচা খেয়ে আবার কাজ করা শুরু করলেন।
তিনটায় বাসায় ফিরে তিনি আলুভর্তা দিয়ে ২ প্লেট এবং শালগমের তরকারি দিয়ে আরেক প্লেট ভাত
খেলেন।
বিকেল বেলা শ্বশুর বাড়ি থেকে পাঠানো এক বাটি গুড়ের পায়েস এবং ৬ টি পুলি পিঠা খেয়ে তিনি
টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়লেন।
সন্ধ্যা ৭ টায় এক বাটি করে নুডলস খেলেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে।
তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মেয়ের বিয়ের দাওয়াতে অফিসার্স ক্লাবে পোঁছলেন রাত ১১ টায়। সব গেস্ট
চলে তখন যাচ্ছেন। গনি মিয়া তাড়াহুড়ো করে সামান্য ঝুল দিয়ে ১ টি নান রুটি , চারটি বড়
সাইজের আলুর টুকরো দিয়ে ২ প্লেট কাচ্চি বিরিয়ানি খেলেন।
ডেজার্ট হিসেবে উপবিষ্ট হলো এক বাটি জর্দা।তিনি সেটিও খেলেন।
একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি হয়েও নিজের অজান্তে গনি মিয়া সারাদিনে যে খাবার গ্রহণ করেছেন
তাতে ৯৩% শর্করা , মাত্র ৪% আমিষ এবং ৩% স্নেহ/চর্বি জাতীয় খাবার রয়েছে।
১২ বছরের একটি ছেলেকে তার মা আমার চেম্বারে নিয়ে এসেছেন ।ছেলের মা'র ভাষ্যমতে ছেলের
মেধা কম।তিনি শুনেছেন হরমোনের সমস্যা থাকলে মেধা হ্রাস পায়।তাই ছেলের মেধা বৃদ্ধি করার
জন্য তিনি ছেলেকে আমার কাছে নিয়ে এসেছেন ।
আমি ছেলেটির বিস্তারিত ইতিহাস নিলাম। আমার কাছে মনে হয়নি তার মেধার সমস্যা আছে।
আজকালকার বাবা-মাদের প্রত্যাশা সন্তানের ক্যাপাসিটির চেয়ে অনেক বেশি।
আমি বললাম " মেধা কম এটা আজকাল কোনো সমস্যাই না।"
মাহিলা অবাক বিস্ময়ের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন " কি বলেন ,স্যার? "
আমি বললাম " হ্যাঁ, আপনার সন্তান যত মেধাশূন্য থাকবে তার ভবিষ্যৎ ততই উজ্জ্বল হবে।আর যত
মেধাবী হবে ততো বেশি নিষ্পেষিত হবে, সুবিধাবঞ্চিত হবে।"
মহিলা চোখ বড় বড় করে আমার কথা শুনতে লাগলেন।
আমি বেশ কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দিলাম।প্রায় দশ মিনিট লেকচার দিলাম। মহিলা ততক্ষণে আমার
কথায় কনভিন্সড হলেন বলে মনে হলো ।
যাবার সময় তিনি বললেন "থাক স্যার, মেধাবী হবার দরকার নেই, যেমন আছে তেমন থাকলেই আমি
খুশি।"
ঘুষের টাকায় ইফতার চলে
সুদের টাকায় সেহেরি
হারাম টাকায় হরদম চলে
পোলাও ,কাচ্চি ,তেহারি।
লুটের টাকায় বছর বছর
আদায় করছ যাকাত
নামাজ তুমি করেই যাচ্ছ
যখন যত রা'কাত।
কালো টাকায় বাবার কাবলি
উপরি টাকায় মা'র শাড়ি
নষ্ট টাকায় ফিতরা দিয়ে
করছ বাহাদুরি।
দিবানিশি করছ দোয়া
কবুল হয় যেন নামাজ রোজা
মুচকি হেসে বলি আমি
ইসলাম কী এতই সোজা!!
......................................
ডা. এম এ হালিম খান
সহকারি অধ্যাপক ( এন্ডোক্রাইনোলজি )
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল
হরেক রকম হরমোন দিয়া
মিলাইছে মেলা (২)
মানবদেহে চলতেছে সব
হরমোনের খেলা। (২)
শত শত হরমোন আছে
দেহঘড়ি চলতে আছে (২)
হরমোন বেড়ে/কমে গেলে
নানান ঝামেলা।
মানব...........
হরমোনে ডিম্বানু ফোঁটে
শুক্রাণুরা বেড়ে ওঠে (২)
হরমোন ছাড়া হয়না শুরু
জীবনের খেলা।
মানব...........…
হরমোনে ভ্রুণ হ্রষ্টপুষ্ট
হরমোনে সন্তান ভূমিষ্ঠ (২)
হরমোন দিয়েই শুরু জীবনের
প্রথম পথ চলা।
মানব...........
শৈশব /কৈশোর/ যৌবন কালে
হরমোন হাওয়া না লাগ্লে পালে(২)
জীবনতরী স্থবির থাকে
না পায় যে ভেলা।
মানব..........
ইনসুলিন হরমোন যদি কম রয়
সুগার বেড়ে ডায়াবেটিস হয় (২)
থাইরয়েড হরমোন কমলে/ বাড়লেও
শুরু হয় জ্বালা ।
মানব.......
হরমোন হালিম ভেবে বলে
হরমোন লাগে মরণকালে (২)
শকে গেলেও হরমোন চেষ্টা
চালায় একেলা।
মানব............ খেলা।
উনো ভাতে দুনো বল
বেশি ভাতে রসাতল ।
লাল ভাতে উপকারী আঁশ
সাদা ভাতে সর্বনাশ ।
সাদা ভাতে টিজি(TG)বাড়ে
ফ্যাটি লিভার হতে পারে।
সাদা ভাতে ডায়াবেটিস হয়
উচ্চরক্তচাপের ঝুঁকিও কম নয়।
সাদা ভাতে মেদ বাড়ে
হৃদরোগ কড়া নাড়ে।
যদি সুস্থ থাকতে চান
সাদা ভাত ছেড়ে লাল ভাত খান।
৫ বছর বয়সী একটি পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে তার মা আমার চেম্বারে এলেন। মেয়েটির হাইপোথাইরইডিজম
আছে। মেয়েটি থাইরক্সিন ট্যাবলেট কিছুতেই খেতে চায়না। জোরজবরদস্তি করে খাওয়াতে চাইলে
অনেক কান্নাকাটি করে। তার মা লুকিয়ে লুকিয়ে বিভিন্ন রকম খাদ্যের সাথে, কলার ভিতরে
ঢুকিয়ে থাইরক্সিন খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পিচ্চি এখন চালাক হয়ে গেছে। মায়ের সকল
আয়োজন ব্যর্থ হচ্ছে বলেই আমার কাছে এসেছেন।
আমি মেয়েটির সাথে কথা বললাম। এক পর্যায়ে বললাম " এই ট্যাবলেটটি খেলে তোমার পড়াশোনা আগের
চেয়ে অনেক বেশি মনে থাকবে এবং তুমি ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারবে। তোমার বাড়তি ওজনটাও কমে
যাবে। তুমি কি ক্লাসে ফার্স্ট হতে চাওনা?"
পিচ্চি ঃ মা, আমি ফার্স্ট হতে চাই। ওজন কমাতে চাই।
মাঃ তাহলে ট্যাবলেটটি প্রতিদিন খেতে হবে।
পিচ্চি ঃ আমি প্রতিদিন সকালে উঠে প্রথমেই ট্যাবলেটটি খাবো।
...........................
দুই মাস পর মহিলা পিচ্চিকে নিয়ে ফলোআপে এলেন। তিনি বললেন পিচ্চি তার কথা রেখেছে। একদিনও
ওষুধটি মিস দেয়নি। পড়াশোনায় আগের চেয়ে অনেক মনোযোগী হয়েছে। কয়েকটি সাবজেক্টে ক্লাসে
সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে।
মেসির বয়স যখন ১০ বছর তখন তার জীবন থমকে গিয়েছিল একটি হরমোনজনিত সমস্যার কারণে। বয়স
বাড়লেও উচ্চতা বাড়ছিলনা মেসির। বাবা মা খেয়াল করলেন মেসির সহপাঠীদের উচ্চতা তরতর করে
বেড়ে গেলেও মেসির উচ্চতা আটকে আছে একটি বিন্দুতে।
চিকিৎসক দেখানোর পর জানা গেলো মেসির গ্রোথ হরমোনের অভাব ( Dwarfism due to Growth
hormone deficiency) রয়েছে।
গ্রোথ হরমোনের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকার মতো খরচ হয়।
মেসির বাবার হেলথ ইন্সুইরেন্স দিয়ে দুই বছর অনেক কষ্টে চিকিৎসা খরচ চললো। এরপর টাকার
অভাবে তার চিকিৎসা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
স্থানীয় ফুটবল ক্লাব রিভার প্লেট মেসির প্রতি তাদের আগ্রহ দেখালেও তার চিকিৎসা খরচ বহন
করতে অপারগতা প্রকাশ করে।
বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রিড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাস মেসির প্রতিভা দেখে মুগ্ধ হোন এবং
বার্সেলোনা মেসির সমস্ত চিকিৎসা খরচ বহন করতে রাজি হয়। মেসির পরিবার পাড়ি জমান
বার্সেলোনায়।
তারপর থেকে মেসিকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
অনেকে মনে করেন মেসির খেলা বান্ধব বিশেষ দৈহিক গঠন
এবং নৈপূন্যের অন্যতম প্রধান কারণ গ্রোথ হরমোন চিকিৎসা।
ডা. এম এ হালিম খান
সহকারী অধ্যাপক (এন্ডোক্রাইনোলজি)
ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।
(কিছু মনে করবেন না। ভেবে ছিলাম গল্পটি লিখবোনা। এরকম একটি গল্প লেখার জন্য কেউ আমাকে
হ্যাংলা মনে করবেন না। )
আমার কাছের একজন মানুষ স্কুল শিক্ষক। ষান্মাসিক পরীক্ষার খাতা দেখার সময় আগ্রহ নিয়ে তার
কাছে বসলাম।
বর্তমান সময়ে ছাত্র -ছাত্রীরা কেমন পড়াশুনা করছে মূলত সেটি জানার জন্যই আমি কয়েকটি খাতা
উল্টেপালটে দেখছিলাম। হঠাৎ একটি সৃজনশীল (???!!!!) প্রশ্নের প্যারার দিকে চোখ পড়লো। আমি
মনযোগ দিয়ে প্যারাটি পড়লাম। দেখলাম প্যারার মূল বক্তব্যের সাথে প্রশ্নগুলোর কোনো মিল
নেই।
আবার প্রশ্নের সাথে উত্তরের কোনো মিল নেই।
একটি প্রশ্ন করা হয়েছে এরকম :
প্রশ্ন : বায়ু কিভাবে দূষিত হয়?
এক ছাত্র উত্তর দিয়েছে - " পাদ দিলে বায়ু দূষিত হয়।"
শিক্ষক আবার ছাত্রটিকে ৫ নম্বরের মধ্যে ৪ নম্বর দিয়েছেন।
আমি বললাম " এরকম একটি উত্তরে নম্বর দিলেন কেনো?"
তিনি বললেন " উত্তরটি সৃজনশীল হয়েছে, সেজন্য নম্বর দিয়েছি। "
এই যদি হয় সৃজনশীল প্রশ্ন এবং সৃজনশীল উত্তরের অবস্থা তাহলে এই "পাদের সৃজনশীলতা" আমি
চাই না ( আমার ব্যক্তিগত মতামত)।
সকল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে প্রকৃত সৃজনশীল প্রশ্ন প্রনয়নে দক্ষ না করতে
পারলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে বাধ্য।
প্রায় তিন মাস আগে একটি ওষুধ কোম্পানির একজন প্রতিনিধি তার ভাগ্নীকে আমার চেম্বারে
নিয়ে এসেছিলেন। ভাগ্নীর সমস্যা হলো সে মেয়ে থাকতে চায়না। এটি কোনো হরমোনের সমস্যা কিনা
সেটি জানার জন্যই মূলত তাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলেন কোম্পানির প্রতিনিধি।
আমি মেয়েটির ডিটেইলস হিস্ট্রি নিয়ে বুঝতে পারলাম তার কোনো হরমোনের সমস্যা থাকার
সম্ভাবনা খুবই কম। কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে দেখা করতে বললাম। মেয়েটি আর আসেনি।
গতকাল কোম্পানির সেই প্রতিনিধি আমার চেম্বারে এসে বললেন " স্যার, আমার এক ভাগ্নীকে নিয়ে
এসেছিলাম, মনে আছে স্যার? "
আমি ঃ "হ্যাঁ, মনে আছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা গুলো করেছিলো? "
প্রতিনিধি ঃ স্যার, কি যে বলবো! কীভাবে যে আপনাকে বলি কিছুই বুঝতে পারছিনা! খুব কষ্টের
একটি ব্যাপার ঘটে গেছে! আপনার শোনার সময় হবে কিনা জানিনা! আবার আপনাকে না বলেও মনে
শান্তি পাচ্ছিনা! "
আমি ঃ বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এর জন্য আজ চেম্বারে রোগী কম আছে। আপনি বলতে চাইলে আমি
শুনতে পারবো।
প্রতিনিধি ঃ "মেয়েটি আমার মিসেসকে নিয়ে পালিয়ে চলে গেছে। "
আমি বিস্মিত হয়ে বললাম
" আপনি না বলেছিলেন ও আপনার ভাগ্নী?! "
প্রতিনিধি ঃ" ও আসলে আমার স্ত্রীর ভগ্নিপতির আপন ভাগ্নী।
আমি খুব কষ্টে আছি স্যার! আমার দুটি ফুটফুটে বাচ্চা ছিলো, তাদেরকেও সাথে করে নিয়ে গেছে।
"
প্রতিনিধি আমার কাছে এসে তাদের সুন্দর সংসারের ছবি দেখালেন। তার চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা
অশ্রু গড়িয়ে পড়লো আমার জামার উপর। আমি বিস্ময় ভরা করুণ মায়াবী চোখে তার দিকে তাকিয়ে
রইলাম।
মানুষের মগজ পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় ওয়ার্কশপ!
ছোট বেলায় আমাদের বাড়িতে আসা একটি কাককে ঢিল ছুঁড়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে মারা গিয়েছিল
কাকটি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই শত শত কাক আমাদের বাড়ি এসে ঘেরাও করেছিল। সারাদিন কাক গুলো
আমাদের বাড়িতে ছিল। তাদের প্রতিবাদ মুখর কা-কা শব্দে বাড়িতে একটি ভয়ানক পরিবেশ তৈরি
হয়েছিল। ভয় আর লজ্জায় আমি লুকিয়ে ছিলাম সারাদিন। খুব মন খারাপ হয়েছিল আমার।
দুই সপ্তাহ আগে নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় আসছিলাম। ময়মনসিংহের কাছাকাছি একটি জায়গায় একটি
কুকুর রাস্তা ক্রস করছিল। আমার গাড়ির সাথে কুকুরটির পা লাগে। ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে চলছিল
কুকুরটি। আমার খুব মায়া হলো। আমি গাড়ি থামিয়ে কিছু একটা করার ইচ্ছে পোষণ করলাম।
মুহূর্তের মধ্যেই আমার গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো ছয় সাতটি কুকুর। যেন তারা এই ঘটনার
বিচার চায়। আমি আবারও ভয় আর লজ্জা পেলাম।
কাক আর কুকুর গুলো এভাবেই একজন আরেকজনের বিপদে এগিয়ে আসে। কষ্ট পায়।প্রতিবাদ করে। আর এক
মানুষ বিপদে পড়লে অন্য মানুষগুলো বিকৃত আনন্দ পায়! মানুষ নাকি সৃষ্টির সেরা জীব!
কয়েকটি অফিসিয়াল চেয়ারের সাথে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার ছিল আমার রুমে। আমি লক্ষ্য করলাম
কোনো রোগীই অফিসিয়াল চেয়ারগুলোতে বসেনা। সবাই প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে। প্লাস্টিকের
চেয়ারটি আমার সামনে না রেখে রুমের এক কোনায়
রাখলাম। রোগী রুমের কোনায় রাখা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে।
দেশের মালিক যে জনগণ সেই জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় কেনা দামী চেয়ারে বসতে কুণ্ঠাবোধ করে
মালিক নিজেই! চাকর হয়ে মালিকের প্রত্যাশাকে এভাবেই আমরা খাটো করে রেখেছি যুগ যুগ ধরে।
বিষয়টি দেখে আমার মনে খুব দাগ কাটে। আমি অনেকটা অভিমান করে প্লাস্টিকের চেয়ারটি আমার
রুম থেকে বের করে বাইরে রেখে দেই। আমার রুমে জনগণের জন্য এখন শুধুই হাই অফিসিয়াল চেয়ার।
কিন্তু এবার দেখা দিয়েছে আরেক সমস্যা। এই হাই অফিসিয়াল চেয়ারে রোগীরা বসতে ইতস্তত
করে।দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে যেতে চায় অনেকেই।
কিন্তু আমার রুমে ঢুকার সাথে সাথে বসাটা বাধ্যতামূলক। এটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমি
তথাকথিত কোনো অফিসার নই, চাকর।
লিডার ঃ এই যে ডাক্তার সাহেব, একটা সুখবর আছে
আমি ঃ বলেন স্যার
লিডার ঃ আমার মিসেস-এর ডায়াবেটিস এখন পুরাই নিয়ন্ত্রণে আছে।
আমি ঃ আলহামদুলিল্লাহ
লিডার ঃ তবে আপনার চিকিৎসায় নয়। আপনার দেওয়া ইন্সুলিন সে বন্ধ করে দিয়েছে।
আমিঃ ও!!! কি নিচ্ছেন মেড্যাম এখন?
লিডার ঃ আমার কাজের মেয়ে বল্লো -মেড্যাম, আমি একটা ট্যাবলেট খাই।খুব ভালো ওষুধ। ফারমেসি
থেকে আমাকে দিয়ে বলেছে এটা খেলে ইন্সুলিন লাগবেনা। যেই কথা সেই কাজ। ওষুধ শুরু করার দুই
দিনের মধ্যে ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। হাজার টাকার ইন্সুলিনের চেয়ে পাচ
টাকা দামের ট্যাবলেট ভালো কাজ করছে। আপনারা কি চিকিৎসা শিখেছেন! আপ্নাদের চেয়েতো আমার
কাজের মেয়েই ভাল ডাক্তার।
আমিঃ ও আচ্ছা! ঠিক আছে! চলুক তাহলে ট্যাবলেটটি।কোন সমস্যা হলে জানাবেন ।
.........…......
পনের দিন পর রাত ১১ টার সময় লিডার আমাকে ফোন দিয়ে বল্লেন -ডাক্তার সাহেব, আমার সর্বনাশ
হয়ে গেছে। আমার মিসেস বর্তমানে আই.সি.ইউ.তে আছে। সুগার নিল হয়ে গিয়েছিল। দোয়া করবেন। ও
ভাল হলে আপনার কাছে নিয়ে আসব।
আমিঃ কোন এক ফাঁকে উনাকে আমি দেখতে আসব।।
প্রথমা-ভাবী আপনি কোন ওষুধটা খাচ্ছেন?
দ্বিতীয়া-আমি কারবিজল খাচ্ছি।
প্রথমা-কেন?আমারওতো থাইরয়েডের সমস্যা। আমি খাচ্ছি থাইরক্স। খুব ভালো ওষুধ ভাবী।আমি এখন
সম্পুর্ণ ভালো আছি।
দ্বিতীয়া- কিন্তু আমিতো ভালো নাই ভাবী। অনেক খারাপ লাগে।
প্রথমা-আমার মনে হয় থাইরক্সটা খেলে আপনি ভালো থাকবেন ভাবী।
প্রথমার কথামতো দ্বিতীয়া থাইরক্স শুরু করলেন এবং ৮ দিন পর প্রায় মরণাপন্ন হয়ে আমার
চেম্বারে এলেন।
(মোরাল অব দ্যা স্টোরি - যে দেশে সবাই বিশেষজ্ঞ, সে দেশ থেকে আসল বিশেষজ্ঞদের প্রস্থান
করা সময়ের দাবী মাত্র)
স্বল্প মাত্রার জন্ম বিরতিকরণ পিল বেশ কিছুদিন ধরে খাচ্ছিলেন একজন ত্রিশ বছরের মহিলা।
স্বামী বিদেশে থাকেন। পিল দেয়া হয়েছিল তার পলিসিস্টক ওভারি সিন্ড্রোমের জন্যে। আমার
কাছে একজন গাইনির মেডাম রোগীকে পাঠিয়েছেন তার থাইরয়েড সমস্যার জন্যে।
আমি রোগীকে জিগ্যেস করলাম -কি কস্ট নিয়ে এসেছেন?
রোগী কাদো কাদো আহ্লাদি ভংগীতে তার রিপোর্টটি দেখিয়ে বল্লেন -স্যার, আমার থাইরয়েডের
সমস্যা দেখা দিয়েছে।
আমি রিপোর্টটি ভাল করে দেখলাম। তার টি ফোর(T4) এবং টি থ্রি(T3) বেশি আছে আর
টিএসএইচ(TSH) নরমাল। একটু ডিটেইলস হিস্ট্রি নেয়ার চেস্টা করলাম।
রোগী ইতোমধ্যে কান্না শুরু করে দিয়েছেন এবং বলতে শুরু করলেন- " স্যার, আমার স্বামী
বিদেশ থেকে আগামী সপ্তাহে দেশে আসছেন। মাত্র দুই মাস দেশে থাকবেন। আমাদের কোন ছেলে মেয়ে
নেই। শুনেছি থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে বাচ্চা নেয়া যায়না।"
আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বল্লাম -"আপনার থাইরয়েডের সমস্যা নেই "
মহিলা অবিশ্বাস ভরা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন "-কিন্তু হরমোন যে বেশি আছে! "
আমি ঃ এটি পিল খাওয়ার জন্যে হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে "ইউথাইরয়েড হাইপার
থাইরক্সিনেমিয়া"। আপ্নার থাইরয়েড সম্পুর্ণ ভাল আছে। আপনি বাচ্চার জন্য এখনই ট্রাই করতে
পারবেন।
মেয়েটির মুখ থেকে অন্ধকার সরে গিয়ে ধীরে ধীরে আলোকিত হতে লাগল। উচ্ছ্বাস ভরা কন্ঠে
তিনি বল্লেন -"থ্যাংকিও স্যার।"
'পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে' এই কথাটি বলার পর বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর বইটি
নিষিদ্ধ করে খ্রিষ্টান পাদ্রীরা (১৬৩৩) এবং তাকে অপশান দেয়া হলো তিনি তার মতবাদ থেকে
সরে আসবেন নাকি জেলে যাবেন। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও জেলখানা বেছে নিলেন। বিজ্ঞানী গ্যালিলিও
বললেন -"আমি জেলে থাকি আর বাইরে থাকি তাতে কিছুই এসে যায়না,পৃথিবী আসলেই সূর্যের
চারদিকে ঘোরে।"
৩০০ বছর লেগেছিল গ্যালিলিওর কথাটি বিশ্বাস করতে!
বার বার হাত ধোয়ার কথা বলায় হাঙ্গেরির চিকিৎসা বিজ্ঞানী স্যামেলওয়েজকে পাগলা গারদে
পাঠিয়ে সেখানে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল (১৮৬৫)।
যূগেযুগে বিজ্ঞানীদের সামনের দিকে এগিয়ে চলা কখনও কুসুমাস্তীর্ণ ছিলনা। তারপরও থেমে
থাকেনি অদম্য মনোবলে বলীয়ান বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করা বিদ্যুৎ, ফ্যান,আর এসির ঠাণ্ডা বাতাস উপভোগ করে যারা
বিজ্ঞানের সমালোচনা করে স্ট্যাটাস দেন বিজ্ঞানীদেরই আবিষ্কার করা মোবাইলে
তাদের কি একটুও বুক কাঁপেনা?
অবশ্য বিজ্ঞানচিন্তা বিবর্জিত মানুষগুলো যখন সমালোচনার ঝড় তোলে তখন আমি খুব আশাবাদী হই
কারণ আমার মনে হয় মুক্তি অতি সন্নিকটে। শুভকামনা গ্লোব বায়োটেক। নিরন্তর ভালবাসা
বিজ্ঞানী আছিফ মাহমুদের জন্য।
অনলাইনের কোন একটা পেইজ থেকে আমার মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে একজন ব্যাংকার আমাকে ফোন
দিয়েছেন-
ব্যাংকারঃ স্যার, আমার ডায়াবেটিস আছে। শুনেছি সুগার বেশি থাকলে নাকি করোনায় সমস্যা হয়।
আমিঃ হ্যাঁ, এই সময়ে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকাটা খুব জরুরি।
ব্যাংকারঃ স্যার, ট্যাবলেট ডাবল করে খেয়ে সুগার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। গতকাল পেয়েছি ২
মিলিমোল।শরীরটা একটু ঘামে। ব্যায়াম বাড়িয়ে দিয়েছি।আশা করি দু'য়েক দিনের মধ্যে সুগার
জিরো-তে নিয়ে আসতে পারবো।
আমি তার কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে চুপ হয়ে থাকলাম আধামিনিট।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে সবচেয়ে কম বয়সে যিনি নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তার নাম 'ব্যান্টিং'।
মাত্র ৩২ বছর বয়সে ১৯২৩ সালে "ইনসুলিন" আবিস্কারের জন্য মেডিসিন অর ফিজিওলজি বিষয়ে তাকে
নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়।
স্যার ব্যান্টিং সার্জারী, অর্থোপেডিক্স, মেডিসিন (জিপি) বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলেও
কোন ক্লিনিক্যাল বিষয়ে তিনি সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হোন। মন খারাপ করে বেছে নিয়েছিলেন
বেসিক সায়েন্স এর ফার্মাকোলজি সাবজেক্টটি। প্রথমে ফার্মাকোলজির লেকচারার ছিলেন
কিছুদিন।পরে একই বিষয়ের উপর এমডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
এমডি ডিগ্রি অর্জনের সময় তার
গবেষণার অংশ ছিল বিটা কোষ এবং ইন্সুলিন বিষয়ক। ১৯২১ সালে আবিষ্কার করলেন চিকিৎসা
বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক অনবদ্য সৃষ্টি ইন্সুলিন।
মানুষের জীবনের কোন একটি জায়গার চরম ব্যর্থতা অন্য একটি জায়গার চরম সফলতার কারণ হতে
পারে। তাই কোন কাজে ব্যর্থ হলে হাল ছেড়ে না দিয়ে অদম্য মনোবলে এগিয়ে গেলে সফলতা আসতে
বাধ্য। ব্যান্টিং যদি ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টে ব্যর্থ না হতেন তাহলে আজও আলোর মুখ নাও
দেখতে পারতো কোটি মানুষের জীবন ফিরিয়ে দেয়া ই-ন-সু-লি-ন।
সদ্য ইন্টার্নশিপ শেষ করে অফিসিয়াল একটি কাজে হাসপাতালে এসেছিল আমার প্রিয় একজন ছাত্র।
তার বাসা আমার বাসা একই রাস্তায়। আমি দুপুর বেলা হাসপাতাল থেকে বের হবার সময় বললাম -
গাড়িতে ওঠো, তোমাকে আজ লিফট দেবো। সে বিনয়ের সাথে গাড়িতে উঠে বসলো। পোস্ট গ্রেজুয়েশন,
বর্তমান প্রেক্ষাপট ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বললাম।
একপর্যায়ে জিজ্ঞেস করলাম - কোথাও কিছু করছো?
ছাত্র ঃ স্যার, একটি ক্লিনিকে কাজ করছি।
আমি ঃ হাত খরচ হয়তো?
ছাত্র ঃ বিশ হাজার টাকা পাই। ভালোই চলছে স্যার।
ইতোমধ্যে তার বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি। সে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো।
আমার ড্রাইভার কিছুটা অবাক হয়ে হাসিমুখে আমাকে জিজ্ঞেস করলো - "স্যার, ডাক্তার স্যার
চাকরি করে আমার সমান বেতনে? মাত্র বিশ হাজার টাকায়?
তাহলে ডাক্তার হয়ে কি লাভ! ড্রাইভার হওয়াইতো ভালো।"
ড্রাইভারের কথা শোনে আমার চোখ ছলছল করতে লাগলো। কারণ প্রায় একই রকম একটি কথা শুনতে
হয়েছিল আমার ইন্টার্নশিপ শেষ হবার পর কোন এক ক্লিনিকের মালিক আমার একজন স্যারের মুখ
থেকে।
কোন পেশাকে আমি ছোট করে দেখছিনা। কিন্তু মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে
এমবিবিএস ডিগ্রি নেয়ার পর যদি একজন চিকিৎসকের বেতন হয় ফাইভ পাশ করা ড্রাইভারের সমান-
সেটা কি মেনে নেয়া যায়? প্রশ্ন আপনাদের বিবেকের কাছে।
হাবু মিয়া ( কাল্পনিক নাম) বাড়ি যাচ্ছে। পথে সাংবাদিক জিজ্ঞেস করলেন - বাড়ি যাচ্ছেন
কেন?
হাবু মিয়া ঃ নতুন বিয়া করছি তো সেজন্যে যাচ্ছি।
সাংবাদিক ঃ সরকারতো বলছে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঈদ পালন করার জন্য।
হাবু মিয়া ঃ আমি নতুন বিয়া করছি। বাড়ি না গেলে বউ যদি চইল্লা যায় সরকার দিব নাকি বউ?
সাংবাদিক ঃ না না। কথা সত্যি। সরকার কোত্থেকে বউ দিবে? সরকার সব পারে কিন্তু বউ দিতে
পারেনা।
হাবু মিয়া বাড়ি পৌছলো রাত ১২ টায়। কিন্তু তার গা কেমন জানি ম্যাজ ম্যাজ করছে। সাথে কাশি
আছে এবং জ্বর জ্বর অনুভূত হচ্ছে। হাবু মিয়া বউকে ডেকে বল্লো "বউ আমার শরীরটা
ভাল্লাগছেনা। একগ্লাস পানি দিবা? "
বউ পানি দিতে দিতে হাবু মিয়ার কপালে হাত দিয়ে বল্লো " হায় হায় তোমারতো দেখি অনেক জ্বর!
তুমি কি ঢাকা থাইকা করোনা নিয়া আইছো? ও মা মাগো!!!!
আমি যাই! "
হাবু মিয়া ঃ কই যাও তুমি?
বউ ঃ আমারে মাফ কইরা দিও। আমি তোমার সাথে নাই।
প্রায় পাঁচ বছরের রেগুলার একজন পেশেন্ট আমার হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেলেন। প্রায় দশ বছর আগে
তার একুট প্যানক্রিয়াটাইটিস হয়েছিল। তার কিছু দিন পর তার ডায়াবেটিস ডেভেলপ করে।আমি তাকে
ইন্সুলিন দিয়ে চিকিৎসা করে আসছিলাম। ইন্সুলিন নিয়ে তার HbA1c সাতের নিচে মেইটেইন্ড
হচ্ছিল।
মাঝখানে প্রায় ৮ মাস তিনি আমার কাছে আসেননি। তিনি চলে গিয়েছিলেন ডায়াবেটিস থেকে চিরতরে
মুক্তি পেতে এক চিকিৎসকের কাছে। সেই চিকিৎসক রোগীর সব ইন্সুলিন বন্ধ করে দিয়ে তার
নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ডায়েট শুরু করলেন।
এক মাস আগে রোগী কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। তার HbA1c
পাওয়া গেল ১৫.২% এবং TG > 1000 mg/dl. আমি বলেছিলাম -" আপনি বিখ্যাত ডায়েটটি ছেড়ে দিয়ে
সুষম খাবার খান এবং ইন্সুলিন শুরু করুন। "
"তিনি আমার কথা রাখলেন না। তিনি রাখলেন "....." সাহেবের কথা। "
গতকাল তিনি আমাকে ফোন করে জানালেন তার উপরের পেটে ব্যাথা এবং সিরাম এমাইলেজ এবং লাইপেজ
প্রায় দশ গুণের বেশি।
আমি বললাম -" একজন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের সাথে কথা বলুন অথবা হাস্পাতালে ভর্তি হউন।
দীর্ঘমেয়াদি কিটো ডায়াটের ফলে আপনার সম্ভবত আবারও প্যানক্রিয়াটাইটিস হয়েছে। "
প্রতি দিন ৫০ মাইক্রোগ্রাম করে থাইরক্সিন খাচ্ছিলেন ২০ বছর বয়সী এক তরুণী।
তার
অতিরিক্ত
ওজনের জন্য তিনি দেখা করলেন একজন চিকিৎসকের সাথে। চিকিৎসক তাকে যথারীতি শর্করা খেতে
বারণ করেন। চিকিৎসক আরও বলেছেন ওজন কমে গেলে হরমোনের ওষুধ বন্ধ করা যাবে।
ডায়েট করে কয়েক কেজি ওজন কমে যাওয়ায় রোগী মনে করেছেন তিনি হরমোনের রোগ থেকে
চিরতরে মুক্তি পেয়েছেন।
তাই তিনি থাইরক্সিন ওষুধ বাদ দিয়ে দিয়েছেন। কারণ চিকিৎসক
তাকে
সফলভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে সঠিক লাইফস্টাইলের মাধ্যমে সকল রোগ থেকে চিরতরে মুক্তি
পাওয়া সম্ভব।
আজ তরুণী আমার চেম্বারে এসেছিলেন টিএসএইচ এর রিপোর্ট নিয়ে,যেটি ছিল 54 mIU/mL.
তরুণী বল্লেন " স্যারের ডায়েট ফলো করে আমি খুব ভালো আছি।"
আমি ঃ " অসংখ্য মানুষ ভালো আছে তাঁকে ফলো করে। যেমন আপনি ভালো আছেন।"
থাইরোটক্সিকোসিস এবং হাইপারথাইরইডিজম শব্দ দুটি সমারথক শব্দ নয়।
হাইপারথাইরইডিজমের
প্রায় সকল পেশেন্টকে এন্টিথাইরয়েড ড্রাগ দিতে হয় কিন্তু থাইরোটক্সিকোসিস- এর সকল
পেশেন্টকে এন্টিথাইরয়েড ড্রাগ দেয়ার প্রয়োজন নেই।
কিছুদিন আগে আমার কাছে একজন আমেরিকা ফেরত মহিলা থাইরোটক্সিকোসিস এর পেশেন্ট এলেন যাকে
আমেরিকান চিকিৎসক কারবিমাজল দিয়েছেন। ওষুধ শুরু করার প্রায় দেড় মাস পর তিনি বাংলাদেশে
চলে এলেন। আমি তার ডিটেলস হিস্ট্রি নিয়ে থাইরয়েড হরমোনের পরিক্ষা করে দেখি দেখি টিএসএইচ
৮৪ মাইক্রো ইন্ট.ইউ/এমএল।
আমি বল্লাম আপ্নার ওষুধটি বন্ধ করতে হবে এবং আপনার সম্ভবত থাইরোটক্সিকোসিস ডিউ টু
সাবএকূট থাইরইডাইটিস আছে। এরকম সমস্যায় আমরা কারবিমাজল দিয়ে চিকিৎসা করিনা। তিনি আমার
কথা শুনে তার চোখে মুখে এমন একটা ভাব দেখালেন যে আমি বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশে
ডাক্তার হয়ে আমেরিকার মতো একটি উন্নত দেশের চিকিৎসকের ভুল ধরছি কোন সাহসে!!
তিনি বল্লেন - আমাকে আমেরিকান ডক্টর এটি দিয়েছেন এবং এটি আমি বন্ধ করতে চাচ্ছিনা কারণ
আমি তিন মাস পর আবার আমি আমেরিকায় চলে যাবো।
- আপনি প্রেগন্যান্ট না হলে হলে আমি এতটা ইনসিস্ট করতাম না। আপনাকে কারবিজল পরিবর্তন
করে কিছু দিন থাইরক্সিন দিয়ে চিকিৎসা করা উচিত।
- ঠিক আছে আমি একটু ভেবে দেখি। দরকার হলে আমি আগামীকাল আপনার কাছে আবার আসবো।আমি আজই
সিরিয়াল দিয়ে যাচ্ছি।
-ওকে।
পরের দিন এবং পরের কোন দিন তিনি আর দেখা করতে আসেননি !!!!!
আমার জন্মস্থান ময়মনসিংহের নেত্রকোনায় প্রতি শুক্রবার আমি রোগী দেখতে যাই।
নিজের
এলাকায়
রোগী দেখে ভিতরে ভিতরে এক ধরনের প্রশান্তি পাওয়া যায়। এলাকার অচেনা /অপরিচিত মানুষকেও
মনে হয় অনেক দিনের চেনা।
একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো রোগীদের ভালোবাসা।
আজ অবিশ্বাস্য এক ভালোবাসার গল্প সবার সাথে শেয়ার করতে চাই।
আমি নেত্রকোনায় পুরোদমে ( প্রতি শুক্রবার) প্রেকটিস শুরু করি ২০১৭ সালের শুরুর দিকে।
আমি বাইরের খাবার খেতে পছন্দ করিনা। তাই শুক্রবারের দুপুরের খাবার প্রথম দিকে আসতে শুরু
করে আমার কাছের আত্মীয় স্বজনের বাসা থেকে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় সেটি আর আত্মীয়
স্বজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়ে আমার রোগীদের মধ্যে। একেক রোগী একেক
শুক্রবারের খাবার দেবার জন্য আগে থেকেই বুকিং দিয়ে যায়। আমি বহুবার বিনয়ের সাথে তাদের
আবেগকে প্রত্যাখ্যান করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। এভাবে ২০১৭ সালের শুরু থেকে
করোনা শুরু হবার আগ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর প্রতি শুক্রবার রোগীরা আমার জন্য খাবার
রান্না করে নিয়ে এসেছে। কাউকে কাউকে খাবার দেবার সিরিয়াল পাবার জন্য এক দুই সপ্তাহ
অপেক্ষাও করতে হয়েছে।
বিরামহীন তিন বছর রোগীর হাতের রান্না খাওয়ার সৌভাগ্য পৃথিবীর খুব কম চিকিৎসকের ভাগ্যে
সম্ভবত জুটেছে।
মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আমি আপ্লূত। কে কোন পেশায় গিয়ে কত গাড়ি বাড়ির মালিক হয়েছে এই সব
বলে আমাকে কেউ হতাশ করতে পারবেন না।
পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পেশাটি আমি জেনে শুনে সজ্ঞানে বেছে নিয়েছি। আমার রোগীদের কাছে আমার
অনেক ঋন আছে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন আমার এক রোগী।
এক মাস আগে মাস্টেকটমি ( এক
স্তন
কেটে ফেলা) করা হয়েছে। বয়স মাত্র ২৫ বছর।
তার স্বামী তাকে আমার চেম্বারে নিয়ে
এসেছেন
হরমোনের সমস্যা সমাধানের জন্য।
আমার সাথে কথা বলার পুরোটা সময় তার চোখ টলমল করছিলো।
চিকিৎসা শেষে চলে যাবার সময় আমাকে ভিজিট দেবার জন্য টাকা বের করলেন।
আমি বললাম " ক্যান্সারে আক্রান্ত কিম্বা ক্যান্সার থেকে মুক্তি পাওয়া কোনো রোগীর কাছ
থেকে আমি ভিজিট নেই না। "
আমার কথা শুনে তিনি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। বললেন " আমারতো সামর্থ্য আছে
স্যার, কেন করুণা দেখাবেন! "
আমি ঃ করুণা ভাবলে আমি খুব কষ্ট পাবো। আমার পেশাগত এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমি এই
কাজটি করি। ক্যান্সারে আক্রান্ত খুব বেশি রোগী আমি পাইনা। হয়তো সেজন্যই করি।"
প্রায় তিন মিনিট তিনি চুপচাপ বসে রইলেন। ভিতর থেকে তার আবেগ উথলে পড়ছিলো। তারপর চোখ
মুছতে মুছতে বের হয়ে চলে গেলেন।
৫ বছর বয়সী একটি পিচ্চি মেয়েকে নিয়ে তার মা আমার চেম্বারে এলেন।
মেয়েটির
হাইপোথাইরইডিজম
আছে। মেয়েটি থাইরক্সিন ট্যাবলেট কিছুতেই খেতে চায়না।
জোরজবরদস্তি করে খাওয়াতে চাইলে
অনেক কান্নাকাটি করে। তার মা লুকিয়ে লুকিয়ে বিভিন্ন রকম খাদ্যের সাথে, কলার ভিতরে
ঢুকিয়ে থাইরক্সিন খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন।
কিন্তু পিচ্চি এখন চালাক হয়ে গেছে।
মায়ের সকল
আয়োজন ব্যর্থ হচ্ছে বলেই আমার কাছে এসেছেন।
আমি মেয়েটির সাথে কথা বললাম। এক পর্যায়ে বললাম " এই ট্যাবলেটটি খেলে তোমার পড়াশোনা আগের
চেয়ে অনেক বেশি মনে থাকবে এবং তুমি ক্লাসে ফার্স্ট হতে পারবে। তোমার বাড়তি ওজনটাও কমে
যাবে। তুমি কি ক্লাসে ফার্স্ট হতে চাওনা?"
পিচ্চি ঃ মা, আমি ফার্স্ট হতে চাই। ওজন কমাতে চাই।
মাঃ তাহলে ট্যাবলেটটি প্রতিদিন খেতে হবে।
পিচ্চি ঃ আমি প্রতিদিন সকালে উঠে প্রথমেই ট্যাবলেটটি খাবো।
...........................
দুই মাস পর মহিলা পিচ্চিকে নিয়ে ফলোআপে এলেন। তিনি বললেন পিচ্চি তার কথা রেখেছে। একদিনও
ওষুধটি মিস দেয়নি। পড়াশোনায় আগের চেয়ে অনেক মনোযোগী হয়েছে। কয়েকটি সাবজেক্টে ক্লাসে
সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছে।
আমার স্কুল ,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে "বংশ পরিচয়" বিষয়টিকে আমি খুব অবজ্ঞা এবং গুরুত্বহীন চোখে দেখতাম। কিন্তু ইদানিং বংশ পরিচয় বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। যদি বিজ্ঞান এবং সমাজের নিরিখে বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখা যাবে "বংশ" বিষয়টি মোটেও অবজ্ঞার বিষয় নয়।
একজন মানুষ ভাল হবে নাকি মন্দ হবে সেটির সমস্ত তথ্যাদি ( Information) তার ক্রোমোজমের সফটওয়্যারে সন্নিবেশিত থাকে।
ডায়াবেটিস , কিছু থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা , উচ্চরক্তচাপসহ আরও অসংখ্য রোগ আছে যেগুলো বংশানুক্রমিকভাবে পরবর্তী জেনারেশনের সদস্যদের হতে পারে।এমনকি কিছু কিছু ক্যান্সার বংশানুক্রমে হয়ে থাকে ( Familial cancer syndrome ) যেমন স্তন ক্যান্সার , ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার, অন্ত্রের ক্যান্সার ,অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ইত্যাদি।
অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ক্রোমোজোমে ত্রুটি রয়েছে বলেই এই রোগ গুলো একসময় প্রকাশ লাভ করে।
মানুষের সমস্ত খারাপ গুণ গুলোকে যদি ভদ্র ভাষায় অসদাচরণ (এর চেয়ে খারাপ কিছু লিখা আমার পক্ষে সম্ভব নয়) রোগ বলি তাহলে দেখা যাবে যে এর পেছনে বংশগত প্রবণতা বা ক্রোমোজোমের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ নষ্ট ক্রোমোজম নিয়ে বেড়ে ওঠা মানুষ জীবনে যতই বড় হউক না কেনো তার থেকে মানুষ উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি পাবে। কথায় আছে ছোট লোক বড় হলে মানুষকে কাঁদায়।
বংশ মর্যাদায় উন্নত অসংখ্য মানুষের সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য হয়েছে এই ক্ষুদ্র জীবনে।আমি দেখেছি মানুষের জন্য ভাল কিছু করার কী ব্যাকুলতা থাকে তাদের মধ্যে! মানুষের জন্য ভাল কিছু করে কেউ কেউ জীবনে অনেক বড় কষ্ট পেয়েছেন। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও তিনি পরোপকার করা ছাড়তে পারছেন না। কারণ এটা তার বংশগত প্রবণতা। তার শরীরে বহমান পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া জিনগুলো তাকে ভালো কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারছেনা।
প্রশ্ন আসতেই পারে তাহলে খারাপ বংশের মানুষ খারাপ কাজ করে আর ভালো বংশের মানুষ ভালো কাজ করে এর ব্যতিক্রম কী কিছু হয়না? হ্যাঁ অবশ্যই হওয়া সম্ভব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা ঘটে আমি তাই বলার চেষ্টা করেছি। ব্যতিক্রম এখানে উল্লেখযোগ্য নয়।
(এটি বিজ্ঞান এবং আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে লিখা। সবাইকে আমার সাথে একমত হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।)
............................
ডা. এম এ হালিম খান
সহকারী অধ্যাপক ( এন্ডোক্রাইনোলজি )
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ,ঢাকা।
মরিঙ্গা পাউডার বা সজনে পাতার গুঁড়া খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসেনা।
অনেক রোগী ডায়াবেটিসের ওষুধ বাদ দিয়ে মরিঙ্গা পাউডার খেয়ে ডায়াবেটিস থেকে চিরতরে মুক্তির স্বপ্ন দেখছেন।
ভ্রান্তির মধ্যে আছেন আপনারা।
মরিঙ্গা পাউডার খেয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে এবং প্রাইভেট চেম্বারে আসছেন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিয়ে।
সেদিন একজন উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তা আমার কাছে জানতে চাইলেন তিনি ডায়াবেটিসের সব ওষুধ বাদ দিয়ে মরিঙ্গা পাউডার খাবেন কিনা।
আমি হেসে বললাম " যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করছে আগে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা উচিৎ।"
বেরী মোবাইল ফোনে গান শুনতে এবং তার জিহবা দিয়ে মোবাইল ফোন স্ক্রল করতে পছন্দ করে। কুকুরকে পশ্চিমারা 'প্রকৃত বন্ধু' বন্ধু মনে করে কারণ -
১. মানুষ মানুষকে কষ্ট দেয় কিন্তু কুকুর কখনো মানুষকে কষ্ট দেয়না
২. কুকুর কখনো তার মালিকের ক্ষতি করেনা কিন্তু মানুষ প্রায়শই মালিকের ক্ষতি করে
৩. কুকুর সর্বদাই প্রভু ভক্ত হয় কিন্তু মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার প্রভুর সাথে বেঈমানি করে
৪. কুকুরের ভালোবাসায় টাকা-পয়সা ,সম্পদ ইত্যাদি পার্থিব কোনো বিষয়ের ব্যাপার থাকেনা। মানুষের ভালোবাসা প্রায় সবসময়ই স্বার্থের বলয়ে আবর্তিত হয়।
৫. কুকুর কখনো তার প্রভুকে ছেড়ে চলে যায়না। কিন্তু স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটলেই মানুষ তার প্রভুকে ত্যাগ করে চলে যায়।
৬. বিপদে পড়লে কুকুর তার জীবনের বিনিময়ে হলেও প্রভুকে রক্ষা করে কিন্তু মানুষ সবসময়ই তার মালিকের বিপদে এগিয়ে আসেনা।
৭. কুকুর মার খেয়েও মুহূর্তের ব্যবধানে তার মালিককে ভালোবাসতে দ্বিধা করেনা আর মানুষ ভালোবাসা পেয়েও মালিকের সাথে বেঈমানি করে।
৮.মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্যারাময় একটি প্রাণী। কিন্তু কুকুর মানুষকে প্যারামুক্ত রাখে।
( মানুষের অন্তত কুকুরের চেয়ে উত্তম হওয়া উচিত )
ডায়েট কোকে ক্যান্সারের উপাদান পাওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করলো বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ডায়েট কোকে কৃত্রিম মিষ্টি হিসেবে ব্যবহার করা ‘অ্যাসপার্টাম’ উপাদানটিকে ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ক্যান্সার গবেষণা সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটি। শুধু পানীয়ই নয় অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত খাবারে অ্যাসপার্টামের উপস্থিতি নিয়ে আরো গবেষণার তাগিদ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
আমাদের জাতীয় ফুল আছে ,জাতীয় ফল আছে কিন্তু জাতীয় সবজি নেই।
লাউ সবজিটিকে জাতীয় সবজি হিসেবে ঘোষণা করার জন্য আমি জোর দাবি জানাচ্ছি।
লাউ একই সঙ্গে শরীর, মাথা এবং পেট ঠান্ডা রাখে।( বাংগালীর মাথা ঠাণ্ডা রাখা খুব জরুরী )
গ্যাস্ট্রিক আলসার,পেটের পীড়া , ডায়াবেটিস ,লিভারের সমস্যা ,হার্টের সমস্যা ,কিডনির সমস্যাসহ শরীরের যেকোন সমস্যায় লাউ খাওয়া যায় ইচ্ছে মতো।
শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরনের পাশাপাশি লাউ আমাদের শরীরের ওজন এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
বেগুনে এলার্জি বাড়ে (কারো কারো), আলুতে ওজন ও ডায়াবেটিস বাড়ে কিন্তু লাউ এমন একটি সবজি যার উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতিকর দিক নেই।
তাই অবিলম্বে লাউকে জাতীয় সব্জি ঘোষণা করা হোক।
যারা আমার মতো বৈরাগী হতে চান তারা এই পোস্টে কমেন্ট করতে পারেন।
(বি:দ্র: এই পোস্ট পাবলিক হবার পর লাউয়ের দাম বেড়ে গেলে কতৃপক্ষ দায়ী নয়।)
"বাংলাদেশের স্বাদের লাউ
রোগ যা-ই থাকুক, পেট ভরে খাও।"
আমার এক প্রিয় ছাত্রের সাথে দেখা হলো ।
সে বললো " স্যার , আপনার পাঞ্জাবিটা খুব সুন্দর !"
আমি মুচকি হেসে বললাম "একজন মানুষের যখন প্রসংশা করবে তখন পুরোটাই করবে। একটি জামা কিংবা পাঞ্জাবি আলাদা করে সুন্দর হয়না। মানুষ যখন গায়ে দেয় তখনই কাপড়টির প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে । একই কাপড়ে একজনকে সুন্দর আর অন্য আরেকজনকে অসুন্দর লাগতে পারে। তাই কাউকে প্রসংশা করার সময় বলা ভালো - পাঞ্জাবিটাতে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে।"
বিনয়ী ছাত্রটি বলল " চমৎকার বলেছেন স্যার ।কখনও এভাবে চিন্তা করিনি।"
"এই নাম্বার গুলোতে কয়েক হাজার করে টাকা পাঠিয়ে দাও।" আমি কয়েকটি নাম্বারে টাকা পাঠিয়েছি আর কয়েকটি নাম্বারে ইচ্ছে করে টাকা পাঠাইনি।
অনলাইনে যারা টাকা চাচ্ছে তাদের সবাই যে সঠিক করছেনা তা নয়। তবে আমি বিশ্বাস করি আমাদের চারপাশে একটু খোঁজাখুঁজি করলে অনলাইনের চেয়ে আরও মানবিক খাত পাবো দান করার জন্য।
আমাদের অভাবগ্রস্ত আত্মীয়- স্বজন ,প্রতিবেশি,এলাকাসী ,ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি আমাদের যাকাতের টাকার প্রকৃত হকদার।
কম।তিনি শুনেছেন হরমোনের সমস্যা থাকলে মেধা হ্রাস পায়।তাই ছেলের মেধা বৃদ্ধি করার জন্য তিনি ছেলেকে আমার কাছে নিয়ে এসেছেন ।
আমি ছেলেটির বিস্তারিত ইতিহাস নিলাম। আমার কাছে মনে হয়নি তার মেধার সমস্যা আছে।
আজকালকার বাবা-মাদের প্রত্যাশা সন্তানের ক্যাপাসিটির চেয়ে অনেক বেশি।
আমি বললাম " মেধা কম এটা আজকাল কোনো সমস্যাই না।"
মাহিলা অবাক বিস্ময়ের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন " কি বলেন ,স্যার? "
আমি বললাম " হ্যাঁ, আপনার সন্তান যত মেধাশূন্য থাকবে তার ভবিষ্যৎ ততই উজ্জ্বল হবে।আর যত মেধাবী হবে ততো বেশি নিষ্পেষিত হবে, সুবিধাবঞ্চিত হবে।"
মহিলা চোখ বড় বড় করে আমার কথা শুনতে লাগলেন।
আমি বেশ কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দিলাম।প্রায় দশ মিনিট লেকচার দিলাম। মহিলা ততক্ষণে আমার কথায় কনভিন্সড হলেন বলে মনে হলো ।
যাবার সময় তিনি বললেন "থাক স্যার, মেধাবী হবার দরকার নেই, যেমন আছে তেমন থাকলেই আমি খুশি।"
আমি লক্ষ্য করলাম কোনো রোগীই অফিসিয়াল চেয়ারগুলোতে বসেনা। সবাই প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে। প্লাস্টিকের চেয়ারটি আমার সামনে না রেখে রুমের এক কোনায়
রাখলাম। রোগী রুমের কোনায় রাখা প্লাস্টিকের চেয়ারেই বসে।
দেশের মালিক যে জনগণ সেই জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় কেনা দামী চেয়ারে বসতে কুণ্ঠাবোধ করে
মালিক নিজেই! চাকর হয়ে মালিকের প্রত্যাশাকে এভাবেই আমরা খাটো করে রেখেছি যুগ যুগ ধরে।
বিষয়টি দেখে আমার মনে খুব দাগ কাটে। আমি অনেকটা অভিমান করে প্লাস্টিকের চেয়ারটি আমার রুম থেকে বের করে বাইরে রেখে দেই। আমার রুমে জনগণের জন্য এখন শুধুই হাই অফিসিয়াল চেয়ার।
কিন্তু এবার দেখা দিয়েছে আরেক সমস্যা। এই হাই অফিসিয়াল চেয়ারে রোগীরা বসতে ইতস্তত বোধ করে।দাঁড়িয়ে থেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে যেতে চায় অনেকেই।
কিন্তু আমার রুমে ঢুকার সাথে সাথে বসাটা বাধ্যতামূলক। এটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমি তথাকথিত কোনো অফিসার নই, চাকর।
রাষ্ট্রের কর্মচারী হিসেবে জনগণকে স্যার ডাকা উচিৎ -এই ধারণা থেকে আমি সরকারি হাসপাতালে এবং প্রাইভেট চেম্বারে আসা আমার রোগীদেরকে ইদানিং স্যার/ম্যাডাম বলেই সম্বোধন করে থাকি।
গত কয়েক দিন আগে একটা মজার ঘটনা ঘটলো। এক ভদ্রমহিলা চেম্বারে আমাকে দেখাতে এলেন। আপাদমস্তক তার বোরখায় ঢাকা।
আমি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললাম "ম্যাডাম , কি সেবা দিতে পারি আপনাকে? "
ভদ্রমহিলা জবাব দিলেন "স্যার ,আমারে ম্যাডাম ডাকেন ক্যান! আমারে চিনতে ফারেন নাই? আমি মরিয়ম। আফনের বাসায় আগে ছুডা কাম করতাম।"
কয়েক বছর আগে একদিন আমার এক প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম," স্যার, ক্যাডারদের মধ্যে কোন ক্যাডার হওয়াটা বেশি সম্মানের?" স্যার বললেন," সম্মান যে কার বেশি এটা বলা খুব মুশকিল। পদমর্যাদার দিকে একজন সচিব একজন ডাক্তারের থেকে উপরে। আবার ঐ সচিবের ছেলেটা যখন ইন্টার পাশ করে সচিবও চায় তার ছেলে যেন ডাক্তারিতে চান্স পায়।"
আসল কথা হচ্ছে, এক পেশার সাথে অন্য পেশার কখনও তুলনা করতে নেই। পৃথিবীতে প্রত্যেকটা সৎ পেশা সম্মানের। যাদের মূলত সুশিক্ষার অভাব ও মানবিক মূল্যবোধের অভাব রয়েছে তারাই শুধু তুলনা করে,তারাই বিতর্ক করে। কেউ কি বলতে পারবেন আপেল ভালো, নাকি কমলা? সাগর, নাকি পাহাড়? গাড়িতে চড়া উচ্চ মানের, না প্লেনে?
ক্যারিয়ারে 'সহযোগী অধ্যাপক' যুক্ত হওয়া উপলক্ষে আমার বাসা এবং হাসপাতাল মিলিয়ে কমপক্ষে ২০ কেজি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির আবির্ভাব ঘটেছে। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি আমি একটি মিষ্টিও মুখে নেইনি। মিষ্টি পাগল আমার এক ডায়াবেটিক রোগীকে যখন এই গল্পটি শুনালাম রোগী বললেন:
" স্যার ,আপনার কি ডায়াবেটিস আছে?"
আমি বললাম : " না "
রোগী বললেন " কিভাবে সম্ভব স্যার?! আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। "
আমি বললাম " এটিই হলো -শিক্ষা। যে শিক্ষা নিজের ভিতরে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনা সে শিক্ষা কোনো শিক্ষা নয়।আমি শিখে গিয়েছি 'মিষ্টি'কোনো ভালো খাবার নয়। মিষ্টি যে আমি একেবারেই খাইনা তা কিন্তু নয়। মিষ্টি খাব কি খাব না সেটি নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা আমার আছে।"
রোগী জবাব দিলেন " আপনার হাত ছুঁয়ে শপথ করলাম স্যার,আর কখনো মিষ্টি খাব না। "
আমি বললাম " অনেকে বলে থাকেন ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরকে 'বিদ্যাসাগর' বলার অন্যতম প্রধান কারণ ছিলো তিনি যে বিদ্যা জানতেন তা তিনি মানতেন,তিনি সবকিছু জানতেন সেজন্যে নয়।"
রোগী : আপনার দেয়া উদাহরণ গুলো শুনে খুব ভালো লাগলো স্যার।
আমি : নিরন্তর শুভকামনা আপনার জন্য।
( একটি লাড্ডু কিংবা রসমালাইতে প্রায় ২৫০ কিলোক্যালরি এনার্জি থাকে। দুটি মিষ্টি খেলে ৫০০ কিলোক্যালরি। ট্রেডমিলে ৫০০ কিলোক্যালরি বার্ন করলে বুঝা যায় কত ধানে কত চাল।
আমরা কায়িক পরিশ্রম কম করি তাই অতিরিক্ত মিষ্টি খেলে স্থূলতা,ডায়াবেটিস,ফ্যাটিলিভার,
হার্টডিজিজ ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে।
মিষ্টি খাওয়া সহজ কিন্তু পরিশ্রম করে এনার্জি বার্ন করা একটি কঠিন কাজ।
সেজন্যে মিষ্টি খাওয়া পরিহার করা উত্তম।)
তিনি ছিলেন প্রচন্ড অহংকারী। আশেপাশের মানুষদের কারণে অকারণে অত্যাচার করতেন।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাততলা বাড়ির মালিক তিনি। কাজের লোক,ড্রাইভার এবং দারোয়ানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতেন।তাদের গায়ে হাত তোলা ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
একসময় তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। সাথে নিয়ে যায় স্ত্রীর ভাগের সম্পদও।
ছেলেমেয়েরাও তাদের ভাগের সম্পদ নিয়ে দূরে সরে যায়।
অহংকারী মানুষটি একসময় একা হয়ে যান। কিন্তু তার অহংকার এবং অত্যাচার আগের মতই বহালতবিয়তে বিদ্যমান আছে।
তার ভাগে পাওয়া দুটি ফ্ল্যাটের মধ্যে একটি ফ্ল্যাট বিক্রি করলেন। তার কিছুদিন পর আরেকটি। তার আর কোনো সম্পদ অবশিষ্ট নেই।
তিনি এখন থাকেন নিজের হাতে বানানো নিজের বাড়ির গ্রাউন্ডফ্লোরের ছোট্ট একটা রুমে। ঘুমান দারোয়ানের সাথে একই মশারির নিচে।মাঝেমধ্যে দারোয়ানের কাজও করেন।
এটি কোনো সিনেমার গল্প নয়।কারো লিখা থেকে কপি করা কোনো গল্পও নয়। নিজের চোখে দেখা একটি জীবনের গল্প।
আমার ছাত্র। ময়লা এপ্রোন পড়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল।
আমি বললাম "ময়লা এপ্রোন পড়ে আমার রুমে আসার জন্য তোমাকে একটি শাস্তি মাথা পেতে নিতে হবে।আমার দেয়া নতুন একটি এপ্রোন তোমাকে আমার সামনে পরিধান করতে হবে।"
শাস্তি পেয়ে সে অনেক খুশি হয়ে বললো " জীবনে আর কখনো ময়লা এপ্রোন পড়বনা স্যার। ঘটনাটি আমার সারাজীবন মনে থাকবে।"
Created by Panacea Live